ভালোবাসার স্বরূপ ও আধুনিক ভালোবাসা
লিখেছেন: ' আফফান মুহাম্মাদ' @ বুধবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১ (৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ)
আমরা জানি প্রেম-ভালোবাসা পবিত্র, নির্মল। আল্লাহ্ তা‘আলাই তা মানুষের অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন। তিনি মহীয়ান গরীয়ান করুণার আধার। তাঁর দয়া ও করুণা সীমাহীন।
ভালোবাসা অনন্ত। তাঁর ভালোবাসার অফুরন্ত ভান্ডার থেকে তিনি মানুষকে কিঞ্চিৎ দান করেছেন। তাই একজন আরেকজনকে ভালোবাসে, মুহাব্বাত করে। ভালোবাসার টানে অন্ধ-বধির হয়।
ভালোবাসা দু’টি সত্ত্বাকে এক সত্ত্বায় পরিণত করে। ভালোবাসা শূণ্য হৃদয় শুধুই নিষ্ঠুর বলে গণ্য হয়। বলা হয়ে থাকে- ‘‘যার মনে ভালোবাসা নেই, সে মানুষ নয়-পশুতুল্য।” বরং পশুর হৃদয়ওতো ভালোবাসায় পূর্ণ।
কিন্তু বর্তমান বিশ্বে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে যে ভালেবাসার প্রবর্তন হচ্ছে, আধুনিক নাটক-উপন্যাসের বইগুলোতে যে প্রেমের হৃদয়গ্রাহী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে, অনেক গল্প ও কবিতার অশ্লীলতায় যে রস ঢেলে দেয়া হচ্ছে, ইন্টারনেটের সার্বক্ষনিক অনুষ্ঠানমালায় যে চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজখ্যাত বুদ্ধিজীবীরা পর্যন্ত যে ভালোবাসার জয়গানে পঞ্চমুখ, যে ভালেবাসার সুফল বর্ণনা করতে করতে মুখে ফেনা উঠছে; তা শুধু অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ-বিচ্ছেদ ও প্রতারণার কৌশল। এ ভালোবাসার উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- এ ভালোবাসায় জড়ালে তার শেষ পরিণতি হয় ‘‘বিচ্ছেদ”। বরং বলা যায় “মধুর বিচ্ছেদ”!!
এ অশ্লীলতার সর্বগ্রাসী আগুন সারা বিশ্বে ছেয়ে দিতে আরেকটি হীন কৌশল অবলম্বন করেছে পাশ্চত্যবাদীরা। তারা ভালোবাসার জন্য একটি দিনকে নির্ধারিত করেছে। এদিনে তারা একে অপরকে মন-প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসার অভিনয় করে। প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাঝে চলে নগ্ন প্রেমের প্রহসন। যেন সারাদিন ধরে ডুবে থাকে একে অপরের মনের গহীনে।
আর লোক দেখানো এ ভালোবাসাকেই দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ভালোবাসার এ দিনটি হলো ‘১৪ ফেব্রুয়ারী’। যে দিনটি হয় সর্বরকমের অশ্লীলতা, নগ্নতা এবং সর্বপ্রকারের বেহায়পনা ও বেলাল্লাপনায় পূর্ণ। আর প্রতি বছর এ দিনটি পালিত হয় “Valentines Day” বা “ভালোবাসা দিবস” হিসাবে।
অথচ ভালোবাসার দ্বিতীয় দিকটি হল পবিত্র ও নির্মল, যা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। তাই ভালোবাসা যদি নিছক আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর জন্য হয়; তাদের অনুসরণ ও অনুকরণে হয়, তাহলে সে ভালোবাসা শুধু বৈধ, প্রশংসিত বা জায়েজই নয়- বরং পূণ্যের বিষয়। সে ভালোবাসার কোন দিন, ক্ষণ বা সময় নির্ধারিত নেই। সর্বাস্থায় এ ভালোবাসার তাকীদ রয়েছে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ
إن الله يقول يوم القيامة أين المتحابون بجلالي، اليوم أظلهم في ظلي يوم لا ظل إلا ظلي—– (رواه مسلم)
অর্থঃ কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ঘোষনা দিবেন, আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পর মহব্বতকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় আশ্রয় দিব। আজতো আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।— (মুসলীম)
অপর এক হাদীসে এসেছেঃ
عن أبي أمامة رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما أحب عبد عبداً لله إلا أكرم ربه عز وجل. —— (رواه أحمد)
অর্থঃ হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা অপর বান্দাকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মহব্বত করে, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তার সম্মান বৃদ্ধি করে দেন।— (মুসনাদে আহমাদ)
তবে কাদের সাথে এ ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে এ বিষয়টিও হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। তিরমীযি শরীফে আছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন “لا تصاحب إلا مؤمنا” অর্থাৎ “মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে সঙ্গী ও সাথী রূপে গ্রহণ কর না।”
তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) নির্দেশিত নিয়মানুযায়ী পরস্পরে মহব্বত তথা ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এ ভালোবাসাই হল প্রকৃত ভালোবাসা।
অপর এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন : من أحب لله و أبغض لله و أعطى لله ومنع لله فقد استكمل ايمانا অর্থাৎ যে আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসবে, আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষন করবে, আল্লাহর জন্য কাউকে দান করবে, আল্লাহর জন্য কোন কিছু থেকে বিরত রাখবে তার ঈমান পূর্ণ হয়ে গেল।
সুতরাং আমরা যাকে ভালবাসব আল্লাহর জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ মেনেই ভালবাসব। যে ভালবাসা হবে পুত পবিত্র। আপনাকে ধন্যবাদ, সুন্দর ও গুরূত্ব পূর্ণ লেখা দেয়ার জন্য।
গুরুত্বপূর্ণ লেখা ভাল লাগল।
Vhi ai lekhata 14 February er agy lekhar dorkar chilo. Tarporo apnake onek thank’s. Allah amader sothik pothy cholar taufik dan korun.
@hafes_alamin,
ভাই লেখাটি আমি ১৩ ফেব্রুয়ারী পোষ্ট করেছিলাম, কিন্তু মডারশনের জালে আটকা পড়ে এতদিন প্রকাশের মুখ দেখেনি।
এ উপলক্ষ্যে ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অনুরোধ যে মডারেশন এর ব্যাপারে আরেকটু যত্নবান হলে বিভিন্ন উপলক্ষ্যের সাথে সম্পৃক্ত লেখাগুলো সময়মত প্রকাশ করা সম্ভব হবে।