চীনে হুই মুসলিম নির্যাতন
লিখেছেন: ' Mahir' @ শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০ (৪:২৪ অপরাহ্ণ)
Contents
একত্রে নয়, একটা একটা করে ঘায়েল করতে হয়
যা রটে তার কিছু হলেও ঘটে
২০১৬ সালের কথা,
মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর এক দ্বীনি ভাই বললেন, “জানো, চীনে নাকি দাড়ি রাখা নিষেধ! “
মনে মনে ভাবলাম, “খবরে তো দেখলাম না। গুজব মনে হয়”।
২০১৭ সালের দিকে,
একই ভাবে, এক দ্বীনি ভাই বললেন, “চীনের মুসলিমদের জোর করে রোযা ভাঙতে বাধ্য করা হচ্ছে”।
এবারও মনে মনে ভাবলাম, “খবরে তো দেখলাম না। গুজব মনে হয়”।
২০১৮ তে খবরে আসলো যে, উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতন চলছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এটা-ই জানাচ্ছে যে, তাদের নির্যাতনের মূল কারন হল, ইসলাম।
বলা হচ্ছে, তাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা করতে অথবা সেই ধর্ম পরিত্যাগ করতে ।
কিন্তু এদেশের নাস্তিকরা দাবি করছে, উইঘুররা দেশদ্রোহী। তাই সরকার তাদের উপর আইন প্রয়োগ করছে! নাস্তিকদের দাবি, চীনের হুই মুসলিমদের উপর কোন নির্যাতন হয় না, কারন হুই-গণ দেশদ্রোহী না। অথচ চীনে প্রায় ১০.৫ মিলিয়ন হুই বাস করে। হুইদের ৫০% হানাফী, ২০% সালাফী বা ওয়াহাবী, ২০% সূফীবাদী। [উইকিপিডিয়া]
কিন্তু সত্য এটা যে, হুই-উইঘুর কিছুই না। নাস্তিক চীন ৫ বছরের মধ্যে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করেছে। [ বিস্তারিত ]
সন্ত্রাসের অজুহাতে প্রহসন
আমি মোটে-ই অবাক হই নি। কারন ২০১৮ সালের শুরুতে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়েও তারা দাবি করেছিল যে, রোহিঙ্গারা দেশদ্রোহী। দেশের নাস্তিক পরিচালিত ফেসবুক গ্রুপের পিনপোস্টে এমন-ই দাবি করা হয়েছিল।
একটা সময় দেশে ক্রসফায়ার এত বেড়েছিল যে, লোকে পরবর্তীতে ক্রসফায়ারকে আর ক্রসফায়ার বলত না, খুন বলত। কারন, যাকে-তাকে খুন করে, সেটাকে ক্রসফায়ারে মারা গেছে বলে পত্রিকায় চালিয়ে দেয়া হত।
আমাদের নাস্তিকদের অবস্থাও একই। বিভিন্ন দেশে মুসলিম নির্যাতনকে দিনে-দুপুরে অস্বীকার করার জন্য তারা আমাদের একই গল্পের পুনঃপুনঃ ছবক দিচ্ছে। এর চেয়ে ভাল হত যদি তারা কোন কথাসাহিত্যিক ভাড়া করে গল্প বানাত। অন্তত সবদেশের মুসলিমদের দেশদ্রোহী ট্যাগ খেতে হত না। তার উপর, যখন এই নির্যাতিত জাতি ঘুরে দাঁড়ায়, তখন নাস্তিকরা মুসলিমদের সন্ত্রাসী সিল দেয়।
তাদের সাজানো বাক্যজালে আকৃতিপ্রাপ্ত উপন্যাসের মজলুম চরিত্রটি নায়ক হিসাবে নয়, বরং খলনায়ক হিসাবে আখ্যায়িত হয়।
“The sinicization of Islam is mostly targeted at Hui Muslims,” Gu told RFA on Monday. “[They] know very well that there’s no point in using the rhetoric of anti-terrorism or separatism to justify it, but it’s still a form of cultural genocide.”
“আরএফএ-কে গু জানিয়েছে যে, ‘ইসলামের চীনা সংস্করণ তৈরির জন্য হুই মুসলিমরা-ই বেশিরভাগ সময় লক্ষবস্তু ছিল। তারা ভাল করেই জানে যে, কথিত সন্ত্রাসবিরোধী বা বাছাই তত্ত্বের ব্যবহার করে কোন লাভ নেই, এটা বাস্তবে গণহত্যা ছাড়া কিছু নয়”। [ বিস্তারিত ]
একত্রে নয়, একটা একটা করে ঘায়েল করতে হয়
রাজনীতির চালে মুসলিমরা বেশ ভাল-ই ফেঁসে গেছে। ব্রিটিশরা যেমন উপমহাদেশে divide and rule ফর্মুলা প্রয়োগ করেছিল। সম্ভবত, চীনও তার ব্যতিক্রম নয়। হুই এবং উইঘুরদের মধ্যে তাই কৃত্তিমভাবে শত্রুতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
ইতিহাস কি বলে?
“The cultural genocide of the Hui Muslims is nothing new: it’s been a core government policy,” he said. “About 60 years ago, they persecuted the Hui scholarly elite, and started a campaign to raise pigs among the Hui.”
“হুই মুসলিমদের সাংস্কৃতিক গণহত্যা নতুন কিছু নয়: এটি পুরানো সরকারী নীতি”, তিনি বলেন। “প্রায় ৬0 বছর আগে, তারা হুই আলিম-উলামাকে অত্যাচার করেছিল এবং হুইদের মধ্যে শূকর পালনের একটি প্রচারণা শুরু করেছিল।” [ বিস্তারিত ]
আর চীন এবার তার ২য় পদক্ষেপ নিয়েছে। তা হল, একতা বিহীন চীনা মুসলিমদের একটি দলকে শুরুতে নিশ্চিহ্ন করা। একটা কয়েন টস করে উইঘুররা জিতে গিয়ে বিপদে পড়ে গেল,আর হুই মুসলিমরা টসে হেরে গিয়ে সাময়িকভাবে বেচে গেল।
কিন্তু হুইরা কি আদৌ চীন সরকার কর্তৃক অস্পৃশ্য থেকে যাবে? উত্তর দিতে গেলে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটা গল্পের কথা মনে পড়ে ।
গল্পটি চারটি গরুকে নিয়ে। তাদের মধ্যে একটি ছিল সাদা আর বাকি তিনটি ছিল কালো বর্ণের। তারা হিংস্র নেকড়ে পরিবেষ্টিত খুব বিপদজনক একটি জায়গায় থাকতো।
একদিন কালোগরু তিনটি গোপনে এক জায়গায় একত্রিত হলো। তারা বললো, সাদা গরুটা আমাদের জন্য বড্ড ঝামেলা সৃষ্টি করছে। আমরা কালো হওয়ায় রাতে আমাদের কেউ দেখতে পায় না, আমরা সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারি। কিন্তু ঐ সাদা গরুকে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে। ফলে আমরা ধরা পড়ে যেতে পারি। তাই, এককাজ করা যাক। আমরা তিনজন একসাথে থাকি, আর ঐ ঝামেলা টাকে আলাদা করে দিই।
সেই রাতে সাদা গরুকে শত্রুর মুখে ছেড়ে দেয়া হয়। পরের রাতে, ৩ টি কালো গরু তিন দিক থেকে আক্রমণ সামাল দিলেও, চতুর্থ দিক থেকে নেকড়েদের আক্রমণের শিকার হয়। এভাবে ১টি কালো গরু মারা যায়। পরের রাতে আবার আরেকটি কালো গরুকে নেকড়েরা নিয়ে যায়। শেষ গরুটি বলেছিল,
“আমি তো সেদিনই মারা গিয়েছি, যেদিন সাদা গরুটি মারা গিয়েছিল। আমি নিজের মৃত্যুকে সেদিনই ডেকে এনেছিলাম। আমি এখন মারা যাচ্ছিনা। আমি আজ মারা যাচ্ছি না। আমি সেদিনই মারা গিয়েছি, যেদিন আমি সাদা গরুটিকে নেকড়ের হাতে একাকি ছেড়ে দিয়েছিলাম।”
গল্পের সারমর্ম হুই মনীষীদের মাথায় ঠিক-ই এসেছিল। তাই হুই কবি চুই তার জাতিকে সতর্ক করে যাচ্ছেন। [বর্তমানে কবি জেলে]
নাস্তিকদের নিকট যা গুজব
চলুন, বঙ্গ নাস্তিকরা আদৌ সঠিক খবর পরিবেশ করে কিনা, তা যাচাই করা যাক।
Beijing has also begun to crack down on the better-integrated Muslim Hui community, which traditionally was allowed far more freedom to establish madrassas and operate mosques, indicating that this is a broader campaign against Islam itself.
“যদিও এতদিন হুইদের মসজিদ-মাদ্রাসা পরিচালনায় বাঁধা দেয়া হত না, সম্প্রতি সুসংহত হুই মুসলিমদের উপরেও বেইজিং ফেটে পড়েছে, যা প্রমাণ করে চীন খোদ ইসলামের উপরেই আক্রমণ চালাচ্ছে”। [ বিস্তারিত ]
হুই মসজিদের ইমামের বক্তব্য,
The imam said that since last year, the suppression in the Ningxia Hui Autonomous Region has been severe.
“ইমাম বলেন, গত বছর থেকে, হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নিংক্সিয়া-তে গুরুতর দমন-নিপীড়ন হয়েছে”। [ বিস্তারিত ]
এবার নাস্তিকদের ভাষায়(!) কিছু গুজব দিচ্ছি।
গুজব :১) হুই মুসলিমরা ইবাদাতে বাধার শিকার হয়।
গুজব:২) হুই মুসলিমদের দ্বীনের ইলম শিখানো নিষেধ।
গুজব :৩) হুইদের মসজিদ সরকার ভেঙে দিতে চায়।
গুজব :৪) হুইদের দোকান ভাংচুর।
গুজব :৫) আযান দেয়া নিষেধ।
গুজব :৬) কুরআন শিক্ষা দেয়ার অপরাধে (!!) হুই মসজিদ বন্ধ।
গুজব :৭) মসজিদে হুই মুসল্লিদের উপর পুলিশের হামলা, ভিডিওসহ ইতিহাসের প্রথম গুজব
গুজব :৮) ২টি মসজিদ ভেঙে ফেলা নিয়ে হাতাহাতি ও এক মুসলিম নারীকে মারধর ।
গুজবঃ ৯) হালাল খাবার নিষিদ্ধ ও হুইদের অপমান করা বৈধ।
China has also discouraged halal food and allowed hostile comments against the Hui to spread in its heavily-censored internet.
গুজবঃ ১০) হুই মুসলিমরা মসজিদ তো দূরের কথা, নিজ ঘরেও সালাত আদায় করতে পারে না।
Aileen, 37, a Hui Muslim from the north-western Gansu province, said officials regularly searched homes and stayed with families in Xinjiang for about a week “to ensure there is no religious practice within the household”.
“উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গানসু প্রদেশের হুই মুসলিম ৩৭ বছর বয়সী আইলিন জানান, কর্মকর্তারা ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ায় এবং শিনজিয়াংয়ের পরিবারগুলোতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ছিল এটা নিশ্চিত করতে যে, বাসা-বাড়িতে কোন উপাসনা চলছে না”।
“Most people don’t keep Korans in their houses anymore,” she said.
তিনি বলেন, “বেশিরভাগ মানুষ কোরআনকে এখন তাদের বাড়ীতে রাখে না”। [ বিস্তারিত ]
গুজবঃ ১১) শুধু মাদ্রাসা নয়, হুই স্কুল থেকেও ইসলামের গন্ধযুক্ত বস্তু সরানো হচ্ছে।
গুজবঃ ১২) হুই মুসলিমদের জন্য বন্দিশিবির বানাচ্ছে চীন। কারন উইঘুরদের কারনে আগের ডিটেনশন ক্যাম্পে জায়গা হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই চীন সরকার হুই মুসলিমদের এতদিন শান্তিতে থাকতে দিয়েছিল।
গুজবঃ ১৩] বর্তমানে উইঘুরদের সাথে বন্দি শিবিরে দিন কাটাচ্ছে হুই জনগণ।
আমি বলব, এটা-ই নাস্তিকদের আসল চেহারা। কথিত অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চূড়ান্ত পরিণতি এটা-ই। মুখে তারা যতই বলুক, আমরা শান্তিকামী। আল্লাহ সাক্ষী দিচ্ছেন, ওরাই ফাসিক [সূরা বাক্বারাহ]। আল্লাহ-র নিকট দুয়া করি, তিনি যেন যালিমদের অপদস্থ করেন। চীনের মুসলিমদের নিরাপত্তা দান করেন। – আমিন।