লগইন রেজিস্ট্রেশন

***বিশ্বাস এবং সৎকর্ম***

লিখেছেন: ' manwithamission' @ শনিবার, জানুয়ারি ৩০, ২০১০ (১২:২১ পূর্বাহ্ণ)

ড. আবু আমেনা বিলাল ফিলিপ

সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য এবং আল্লাহ তাআলার শান্তি ও রহমত শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং যারা মৃত্যর পূর্ব পর্যন্ত সঠিক পথে অবিচল থাকে তাদের উপর অর্পিত হোক। আজকের আলোচনার বিষয়টি হচ্ছে, “ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস”। সাধারণত ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই আমরা ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তি বা খুঁটির উপর প্রতিষ্ঠিত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করি যেমন: সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত(নামাজ), যাকাত, সাওম(রোজা) এবং হজ্জ্ব। আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করব না তবে এই মৌলিক বিশ্বাসগুলো পিছনে যে প্রধানতম বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। কাজেই আজকের আলোচনার সারমর্ম হিসেবে দুইটি বিষয় উল্লেখ করতে পারি আর তা হচ্ছে বিশ্বাস এবং সৎকর্ম

বিশ্বাস এবং সৎকর্ম ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্বাস এবং সৎকর্ম একে অপরের সাথে জড়িত অর্থাৎ একটিকে অপরটি থেকে পৃথক করার কোন উপায় নেই। মৌলিক বিশ্বাসগুলোর প্রথম খুঁটিটিই হচ্ছে সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া। সত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মুসলিম কমিউনিটির অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কেউ ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল

আমরা এই সত্যের সাক্ষ্যটি প্রকাশ্যে দেই আর গোপনে দেই তাতে প্রমাণ হবে না আমাদের বিশ্বাস আছে কি নেই, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস একজনের অন্তরে অবস্থান করে। তবে, কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করতে চায় তখন তাকে প্রকাশ্য সাক্ষ্য দিতে হয় যার ফলে মুসলিম কমিউনিটি বুঝতে পারে সে ব্যক্তি এখন থেকে মুসলিম কমিউনিটির অন্তর্ভূক্ত। এই প্রকাশ্য সাক্ষ্যটি যে দেয় তা তার নিজের এবং মুসলিম কমিউনিটি উভয়ের লাভের জন্যই। কারণ, কেউ যদি সত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়টি গোপন করে রাখে তখন সে নানাবিধ বিপর্যয়ে পরতে পারে যেমন: সে হয়তো কোন একটি ইবাদত করতে যাবে তখন সে বাধাগ্রস্থ হতে পারে, শয়তান তাকে বিভিন্ন কুমন্ত্রণা দিবে আর যার ফলে সে হয়তো মনের মাঝে দূর্বলতা অনুভব করবে কিংবা সেই ইবাদত থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু সে যদি মুসলিম কমিউনিটিকে জানিয়ে রাখে যে সেও তাদের একজন এবং কোন ইবাদত করা থেকে বিরত হয় তখন মুসলিম কমিউনিটি তাকে জিজ্ঞেস করবে, কি ব্যাপার? তুমি এই ইবাদতটি করছ না কেন? বা সে বিপদে পরলে মুসলিম কমিউনিটি তাকে সাহায্য করবে। কাজেই সত্যের সাক্ষ্যটি যখন মুসলিম কমিউনিটি জানবে তখন তারা তার সৎকর্মের সাক্ষ্যি হবে, তাকে বিভিন্ন সৎকর্ম করতে সাহায্য করবে। আর যার কারণেই প্রকাশ্যে সত্যের সাক্ষ্য দিতে হয়।

এই সত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার পরই আমরা বাকি চারটি ইসলামের ভিত্তি আমাদের উপর অর্পিত হয় সেগুলো হল, প্রত্যেক দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, বছরে একবার যাকাত দেওয়া, রমাদান মাসে রোজা রাখা এবং বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘরে হজ্জ্ব করা। কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রধান পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে সত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়টি প্রধানতম বিষয়। এই সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া তথা ঈমান আবার ছয়টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বলেছেন: আল্লাহর উপর বিশ্বাস, নবী-রাসূলদের উপর বিশ্বাস, আসমানী কিতাব সমূহের উপর বিশ্বাস, ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস, পরকালের উপর বিশ্বাস এবং তাকদীরের উপর বিশ্বাস। ঈমান এই ছয়টি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত আর এগুলো হচ্ছে প্রধানতম বিষয় অর্থাৎ এগুলোর উপর আমাদের বিশ্বাস থাকতেই হবে। কিন্তু শুধুমাত্র এগুলো উপর বিশ্বাস করলেই হবে না, আমাদের এমন কাজ করতে হবে যার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হবে যে আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত। এই বিষয়টি সূরা আছরের মধ্যে সারমর্ম হিসেবে দেওয়া আছে। যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে কিন্তু তারা ব্যতীত যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকর্ম করে। সুতরাং এই বিষয়টি পরিস্কার যে, মানুষ এই পার্থিব জীবনে যাই অর্জন করুক না কেন, যত খ্যাতি-প্রতিপত্তি, সম্পদ অর্জন করুন না কেন সে তা হারিয়ে ফেলবে কিন্তু তারা ব্যতীত যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকর্ম করে

এই বিশ্বাস এবং সৎকর্মের বিষয়টি আমরা এইভাবে দেখতে পারি যেমন:
*সৎকর্ম এবং বিশ্বাস
*বিশ্বাস ব্যতীত সৎকর্ম
*সৎকর্ম ব্যতীত বিশ্বাস
*সঠিক উপায়ে সৎকর্ম ব্যতীত বিশ্বাস

বিশ্বাস ব্যতীত সৎকর্মঃ
এখন প্রথমেই আমরা সৎকর্মটি নিয়ে আলোচনা করব। যদি আমরা বিশ্বাস ছাড়া সৎকর্ম করি তখন সেই সৎকর্মটি পরকালে আমাদের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না। কারণ এই সৎকর্মটি করা হবে বস্তুবাদী প্রয়োজনের জন্য, সেই এই সৎকর্মটি করবে বস্তুবাদী কোন কিছু অর্জন করার জন্য। সে আপনার সাথে ভাল ব্যবহার করবে কারণ সে আপনার কাছে এমন কিছু আশা করবে যা তার প্রয়োজন। আপনার সাথে ভাল ব্যবহার করার কারণে সেই ব্যক্তিটি ধীরে ধীরে আপনার বন্ধু হয়ে উঠবে এবং এক পর্যায়ে আপনি তাকে অনুমতি দিয়ে দিবেন, প্রয়োজনে তুমি এটা ব্যবহার করতে পার। উদাহরণ স্বরুপ আমরা বলতে পারি, আপনি যদি পশ্চিমা কোন শপিং মলে কাজ করতে যান তখন তারা প্রথমেই আপনাকে ট্রেনিং দিবে। তাদের ট্রেনিং এর প্রধানতম একটা বিষয় হচ্ছে যে, কাউন্টারে যখন ক্রেতা আসবে তখন ক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে আপনাকে হাঁসতে হবে। আপনার যতই সমস্যা থাকুক না কেন, আপনার যতই বিপদ থাকুক না কেন আপনি যখনই শপিং মলে আসবেন তখনই আপনার মুখে হাঁসি ফুটিয়ে তুলতে হবে, ক্রেতাদের উদ্দেশ্য করে হাঁসতে হবে। এটাই হচ্ছে বস্তুবাদী স্বার্থ অর্থাৎ আপনি ক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে হাঁসছেন তার মানে এই না যে আপনি নিজেও আনন্দ অনুভব করছেন। আপনার হাঁসার উদ্দেশ্যে হচ্ছে সে ব্যক্তিটি যেন পুনরায় আবার আপনাদের শপিং মলে আসে এবং আরো কেনাকাটা করে। কিন্তু অপরকে উদ্দেশ্য করে হাঁসা একটি সৎকর্ম, কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি তোমার ভাইকে উদ্দেশ্য করে হাঁসবে তখন তুমি একটি সৎ কর্ম করলে। এখন আপনি যখন হাঁসছেন তখন আপনি এই উদ্দেশ্যে হাঁসছেন না যে আপনি একটি সৎকর্ম করছেন বরং আপনি হাঁসছেন যাতে করে ক্রেতাটি আন্তরিক পরিবেশ অনুভব করে এবং পুনারায় সেখানে কেনাকাটা করতে আসে। অর্থাৎ ক্রেতা আসলেই আপনাকে হাঁসতে হবে। আর এটা হচ্ছে একটা সৎকর্ম কিন্তু যেখানে বিশ্বাস অনুপস্থিত। আর এ কারণেই এই রকম সৎকর্মের কোনই মূল্য নেই। আল্লাহ এই ধরণের সৎকর্ম গ্রহণ করবেন না এবং যে ব্যক্তি এই রকম সৎকর্ম করবে সেও কোন সওয়াব বা পুরস্কার পাবে না। একইভাবে একজন ব্যক্তি একটি সৎকর্ম করল কিন্তু তার মাঝে যদি সঠিক বিশ্বাস না থাকে বা তার বিশ্বাস বিকৃত হয়ে যায় তাহলে পরিশেষে দেখা যাবে সে যেকোন একটি উপায়ে Idolatry বা মূর্তিপূজার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত করার পরিবর্তে সে মূর্তিপূজা শুরু করবে। কিন্তু সে মনে করবে সে আল্লাহর ইবাদত করছে আর আমি বলছি না সে ইচ্ছা করে মূর্তিপুজা করছে কিন্তু পরিশেষে সে এটাই করবে। সে বিশ্বাস করবে সে আল্লাহর ইবাদত করছে।

আপনারা জানেন এবং আপনারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে দেখা করে থাকেন। তাদের মধ্যে হয়তো কেউ খ্রিস্টান, কেউ হিন্দু, কেউ বুদ্ধিস্ট। আপনি দেখবেন তাদের অনেক দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে কিন্তু তাদের এই বিশ্বাস সঠিক নয় আর যার ফলে পরিশেষে তারা মূর্তিপূজা করে। তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করছে কিন্তু তারা মনে করছে তারা আল্লাহকেই উপাসনা করছে। এটাই হচ্ছে সঠিক বিশ্বাস ব্যাতীত সৎকর্ম । উদাহরণ স্বরুপ আমরা খ্রিস্টানদের কথা বলতে পারি, যদি আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কেন ঈসা (আ) এর উপসনা কর? তারা বলবে, আমরা ঈসা (আ) এর মানব আকৃতিকে উপাসনা করি না কিন্তু আমরা উপাসনা করি ঈশ্বরের যিনি মানব আকৃতিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এটা হচ্ছে ঈসা (আ) কে উপসনা করার একটি প্রতরণা পূর্ণ যুক্তি যা তারা জিসাসকে উপসনা করার ব্যাখ্যা হিসেবে বলে থাকে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা একজন মানুষকেই উপসনা করছে। এটাই হচ্ছে Idolatry। একইভাবে আপনি যদি কোন শিক্ষিত হিন্দুকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কেন এই মূর্তিগুলোর পূজা কর? সে বলবে, তুমি যে মূর্তিটি আমার সামনে দেখছ আমি তো তার উপাসনা করছি না, আমি উপাসনা করছি বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সৃষ্টিকর্তাকে যিনি সকল সৃষ্টির মধ্যে উপস্থিত, আমি উপাসনা করছি এই মূর্তিরটির মধ্যে উপস্থিত সৃষ্টিকর্তাকে, আর আমি জানি এই মূর্তিকে যদি আঘাত করি তাহলে এটা ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং আপনারা দেখলেন সে কি যুক্তি ব্যবহার করছে। সে বিশ্বাস করছে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর উপাসনা করছে। যার শেষ ফলাফল হচ্ছে সে একটি মূর্তির নিকট মাথা নীচু করছে আর এটাই হচ্ছে সঠিক বিশ্বাস ব্যাতীত সৎকর্ম।

সৎকর্ম ব্যতীত বিশ্বাস
এরপর আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো তাহলো সৎকর্ম ব্যাতীত বিশ্বাস। আপনারা অনেক লোকদের দেখে থাকবেন যারা নামাজ পড়ে না কিন্তু তারা আপনাকে বলবে, আমার বিশ্বাস আমার অন্তরের মধ্যে রয়েছে। আমার বিশ্বাসকে দেখানোর জন্য আমার কোন সাইনবোর্ডের দরকার নেই যেমনটি তোমরা নামাজ, রোজা করার মাধ্যমে সাইনবোর্ড ধারণ করে তোমাদের বিশ্বাসগুলোকে প্রদর্শন করছ। আমার বিশ্বাস আমার অন্তরের মধ্যে রয়েছে, আমি এটার প্রতি আন্তরিকও আর আমি এটা প্রদর্শন করে দেখাতে চাই না। তবে ইসলামে এই ধরণের যুক্তি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই পরিস্কারভাবে বলেছেন, বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত আর যে কেউ এই নামাজ পরিত্যাগ করবে সে একজন অবিশ্বাসী তথা কাফির হয়ে যাবে। এটা হচ্ছে ইসলামের প্রধানতম বিষয়। কেউ বলছে তার বিশ্বাস তার অন্তরে রয়েছে কিন্তু নামাজ পড়ছে না তখন এই নামাজ না পড়াটা তার অন্তরের বিশ্বাসকে বাতিল করে দিচ্ছে অর্থাৎ তার সেই বিশ্বাসের কোন মূল্যই থাকছে না। আর এটাকে কোন বিশ্বাসই বলা যায় না বরং এটাকে কতগুলো কথার সমষ্টি বলা যায়। প্রকৃতপক্ষে এটাকে জ্ঞান বলা যায় আর বিশ্বাস এবং জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আর এটাতেই মানুষজন বিভ্রান্ত হয়ে পরে।

এখানে একটি বিষয় হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করে নেওয়া, আপনি জানেন অবশ্যই আল্লাহর অস্তিত্ব রয়েছে, যাকে আমরা জ্ঞান বলতে পারি আর আরেকটি বিষয় হচ্ছে সেই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এখন এই জ্ঞান আপনাকে সৎকর্ম করতে বলবে না কিন্তু বিশ্বাস আপনাকে সৎকর্ম করতে বলবে। এটাই হচ্ছে এই দুইটির মধ্যে পার্থক্য। কাজেই যারা বলবে আমার বিশ্বাস রয়েছে কিন্তু আসলে আমি নামাজ পড়ার বিষয়টি অনুভব করি না, তাদের এই ধরণের বিশ্বাসকে আমরা শয়তানের বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করতে পারি অর্থাৎ যে বিশ্বাস শয়তানের বিশ্বাসের মতো। কারণ শয়তান আল্লাহকে জানতো, আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করতো কিন্তু যখন তাকে আদেশ করা হলো আদমের সামনে সিজদা করার জন্য তখন সে তা অমান্য করেছিল। সে আল্লাহকে চিনতো কিন্তু তার মধ্যে বিশ্বাস অনুপস্থিত ছিল আর বিশ্বাস অনুপস্থিত থাকার কারণেই আল্লাহর অস্তিত্বের জ্ঞান তাকে আল্লাহর আদেশ পালনে প্ররোচিত করেনি। আর এটাই হচ্ছে বিশ্বাস এবং জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য। কাজেই যারা বলবে যে তাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রয়েছে কিন্তু আল্লাহ তাদের যেভাবে কাজ করতে আদেশ করেছেন সেভাবে করছে না তাহলে প্রকৃতপক্ষে তাদের আল্লাহর প্রতি কোন বিশ্বাসই নেই। তাদের আল্লাহ সম্পর্কিত জ্ঞান রয়েছে, ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান তাদের রয়েছে আর মাঝেমাঝে আমরা এমন অনেক লোকের দেখা পাই যাদের আল্লাহ এবং ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান অনেক চমৎকার। তারা মুসলিম হিসেবেই জন্ম গ্রহণ করে আর তারা আপনাকে বলবে, হ্যাঁ ইসলাম তোমাকে এটা করতে বলে, ওটা করতে নিষেধ করে কিন্তু তারা নিজেরাই তা করে না। উদাহরণ স্বরুপ বলতে পারি, আমি যখন রিয়াদের একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম যেখানে অ্যারাবিক সেকশন এবং ইংলিশ সেকশন ছিল। অনেক আরব শিশু রয়েছে যারা নামাজ পড়ার জন্য, অজু করার জন্য, কোন কোন জিনিসগুলো অপরিহার্য এবং কিবলা কি সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখে। কিন্তু যখন নামাজের সময় হয় তারা অজু ছাড়াই নামাজ পরে ফেলে! কিন্তু আপনি যদি তাদের জিজ্ঞাসা করেন নামাজ পরার জন্য কোন জিনিসটি আবশ্যক তারা বলবে, অজু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অজু ব্যতীত কোন নামাজ গ্রহণযোগ্য নয়। আর এটা হচ্ছে নামাজ পড়ার জন্য একটা মৌলিক বিষয়। কিন্তু এরপরও তারা অজু ব্যতীত নামাজ পরে! কারণ তারা জানে, যদি তারা নামাজ না পরে তাহলে তাদের শিক্ষক প্রিন্সিপালের নিকট রিপোর্ট করবে আর যার ফলে তারা বিপদে পরে যাবে। যখন তাদের শিক্ষক এসে তাদের সামনে উপস্থিত হয় আর তারা হয়তো অন্যকাজে ব্যস্ত ছিল কিন্তু শিক্ষককে দেখেই অজু ছাড়াই নামাজ পড়তে শুরু করে দেয়। আর এটাই হচ্ছে বিশ্বাস ব্যতীত জ্ঞান। অর্থাৎ তাদের মাঝে বিশ্বাস অনুপস্থিত। এই বিষয়টা খুবই বিপদজনক।
কাজেই যারা ইসলাম শিক্ষা দেন তাদেরকে এই বিষয়টির প্রতি খুবই সতর্ক হতে হবে। আমরা লোকজনকে এমন পন্থায় ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দিব যাতে করে সেই শিক্ষা দিয়ে তারা যেন তাদের বিশ্বাসকে উন্নত করতে পারে। আমরা এমন পন্থায় দিব না যেন ইসলাম সম্পর্কিত শিক্ষা দানের বিষয়টি শুধুমাত্র জ্ঞান বিতরণের মতে হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা শুধু জানল ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান কি কিন্তু তাদের বিশ্বাস উন্নত হলো না। আর দূর্ভাগ্যজনক ভাবে শুধুমাত্র জ্ঞান বিতরণের বিষয়টি সব জায়গায় ঘটছে। আমরা যারা ইসলাম সম্পর্কিত শিক্ষা দান করে থাকি তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের অন্তর থেকে শিক্ষা দান করি না। আমি বলছি না সকল শিক্ষকই এমন কিন্তু অধিকাংশই এমন। তারা এটাকে চাকুরী হিসেবে দেখে। তারা স্কুলে যায় এবং চাকুরী হিসেবে ইসলাম সম্পর্কিত শিক্ষা দিয়ে থাকে। যার ফলে আমরা দেখতে পাই, ছাত্রদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান রয়েছে কিন্তু তাদের মাঝে বিশ্বাস অনুপস্থিত। কারণ বলা হয়ে থাকে, যা মুখ থেকে আসে তা কানের ভিতর দিয়ে চলে যায় আর যা অন্তর থেকে আসে তা অন্তরের মধ্যে অবস্থান করে। কাজেই যারা ইসলাম সম্পর্কিত শিক্ষা প্রদান করে থাকেন তাদের নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস থাকতে হবে। তারা ইসলামী শিক্ষা দানের বিষয়টি শুধুমাত্র চাকুরী হিসেবে দেখবেন না বরং আল্লাহ কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত একটি দায়িত্ব হিসেবে দেখবেন, তারা যা শিক্ষা দান করবেন সে জন্য তারা আল্লাহর নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন। যদি শিক্ষকদের মাঝে এই ধরণের মনোভাব থাকে তাহলে যারা শিক্ষা গ্রহণ করছে তাদের জীবনের মাঝে আমরা এর একটি অর্থবহ ফলাফল দেখতে পাবো।

সঠিক উপায়ে সৎকর্ম ব্যতীত বিশ্বাস
এরপর যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হল, সঠিক উপায়ে সৎকর্ম ব্যাতীত বিশ্বাস। আপনারা অনেক মানুষকে পাবেন যাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অনেক মজবুত। কিন্তু বিশ্বাস মজবুত থাকলেও তারা সৎকর্মটি সঠিক পন্থায় করে না। তারা ঐ সকল বিষয়ের অনুসরণ করে যেগুলো এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম পর্যন্ত যা পৌছেছে অর্থাৎ যেগুলো তারা তাদের বাপ-দাদাদের মাধ্যমে পেয়েছে। এই ইসলামকে আমরা বলতে পারি কালচারাল ইসলাম আর খ্রিস্টান মিশনারীরা যারা মিশনারীর কাজে নিয়োজিত তারা এটাকে বলে থাকে Folk ইসলাম। আপনি যদি তাদের মিশনারী কাজের রিপোর্টগুলো পড়েন তাহলে দেখবেন সেখানে পরিস্কার ভাষায় লেখা রয়েছে যে, আমাদের Folk ইসলামের প্রতি বেশী জোর দিতে হবে, আর এভাবেই আমরা তাদের কাছে ঈসা (আ) বার্তা পৌছে দিতে পারবো। কারণ, Folk ইসলাম একজনের বিশ্বাসকে রক্ষা করতে পারে না। এই Folk ইসলামের মধ্যে এমন অনেক কিছুর অনুসরণ করা হয় যা ইসলাম অনুমোদন করে নি। আর এটা মিশনারীদের জন্যে অনেজ সহজ কারণ Folk ইসলামের সাথে খ্রিস্টিয়ানিটির অনেক মিল রয়েছে। তাদের রিপোর্টে লেখা রয়েছে, আমাদেরকে অবশ্যই ভাল মুসলমানদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে অর্থাৎ যাদের সঠিক বিশ্বাস রয়েছে আর যারা সৎকর্ম করে ঠিক সেইভাবে যেভাবে করতে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন। তারা এই ধরণের মুসলিমদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।
এই মিশনারীরা যে সকল জায়গায় তাদের কার্যক্রম চালাতে সফল হয়েছে আপনারা যদি সেদিকে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশের মতো জায়গাগুলো। মিশনারীরা এমনসব জায়গায় যায় যেখানকার মানুষগুলো খুবই দরিদ্র এবং অশিক্ষিত। তারা সেখানে যেয়ে তাদের টাকা দেয়, তাদের সাহায্য করে আর বলে আমরা তোমাদের সাহায্য করছি কারণ তোমাদের প্রতি ঈসা (আ) এর ভালবাসা রয়েছে এরপর সেই লোকগুলোকে তারা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করায়। এই একই ঘটনা ঘটছে ইন্দোনেশিয়াতেও যেখানে মানুষগুলো ইসলামের নামে এমন সব কাজ করছে যেগুলোর ইসলামে কোন অস্তিত্বই নেই। যদিও মিশনারীরা হাজার হাজার মুসলিমকে খ্রিস্টান বানাচ্ছে কিন্তু আপনি তাদের মাঝে একজন ইসলামিক স্কলার বা যে জানতো ইসলাম বলতে সত্যিই কি বুঝায় এমন কাউকে খুজে পাবেন না। বিপরীতদিকে আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, যারা খ্রিস্টান থেকে ইসলাম গ্রহণ করছে তাদের মধ্যে অনেক স্কলার রয়েছে। এটা পরিস্কার যে যারাই জ্ঞানী তারাই ইসলাম গ্রহণ করছে।
প্রকৃতপক্ষে অশিক্ষিত লোকদের বুঝানো খুবই কঠিন কারণ তারা যেভাবে ইসলাম পালন করছে তার প্রতি খুবই ইমোশনাল। সুতরাং এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি সঠিক পন্থায় সৎকর্ম করা আবশ্যক অর্থাৎ বিশ্বাস এবং সৎকর্মের সাথে সঠিক পন্থায় সৎকর্ম বিষয়টি থাকতে হবে। কারণ, কেউ যদি ভুল পন্থায় সৎকর্ম করে আর যদিও তার বিশ্বাস ঠিক থাকে কিন্তু এক পর্যায় যেয়ে সে শিরকে লিপ্ত হয়ে পরবে। উদাহরণ স্বরুপ আমরা বলতে পারি, ভারত এবং মিশরের মতো দেশের কথা, সেখানে যখন কোন সৎ লোক মারা যায় তারা তখন তার কবরের উপর মাজার তৈরী করা হয় এবং মানুষজন সেখানে যাওয়া শুরু করে, কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা শুরু করে, মৃত ব্যক্তিদের তারা উছিলা হিসেবে গ্রহণ করে অর্থাৎ তারা মনে করে তাদের প্রার্থনা এই মৃত ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট পৌছে দিবে আর ফলশ্রুতিতে তাদের দোয়া কবুল হবে। আপনারা যদি ব্যক্তিগতভাবে এই ধরণের মানুষদের সাথে কথা বলেন তাহলে দেখতে পাবেন তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতি খুবই দৃঢ়। এমনকি তারা তাদের বিশ্বাসের জন্য মরতেও রাজি কিংবা আপনারা যদি তাদের সামনে ইসলাম সম্পর্কে কোন খারাপ কথা বলেন তারা আপনাকে মেরে পর্যন্ত ফেলবে! কিন্তু ইবাদত কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত আর যার ফলশ্রুতিতে তারা শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা এমন পন্থায় ইবাদতে লিপ্ত হয়ে পড়ে যা তাদের বিশ্বাসকে বাতিল করে দেয়। কারণ, কুরআনে আল্লাহ তাআলা পরিস্কার করে বলেছেন, শিরক ব্যতীত বান্দাহ যত প্রকার গুণাহই করুক না কেন আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিতে পারেন। শিরক যার মানে হচ্ছে অন্য কাউকে আল্লাহর সাথে ইবাদত করা। এই গুণাহটাই হচ্ছে একমাত্র ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আর কেউ যদি এই শিরক করা অবস্থায় মারা যায় তখন সে নিজেকে গ্যারান্টি দিতে পারে যে সে চিরদিনের জন্য জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যাবে! আমাদের বিশ্বাস এবং সৎকর্ম হতে হবে সঠিক বিশ্বাস এবং সঠিক পন্থায় আর আমরা যদি তা করি আল্লাহ তাআলা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে এই দুনিয়া এবং পরকাল উভয় স্থানেই আমরা সাফল্য মন্ডিত হব।

এখন এটা আমাদের জন্য জানা আবশ্যক যে সঠিক বিশ্বাস বলতে আসলে কি বুঝায় বা সঠিক বিশ্বাসের জন্য আমাদের কি কি জানা প্রয়োজন। সঠিক বিশ্বাসের জন্য প্রথমেই আল্লাহকে চিনতে হবে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, যিনি এই সমগ্র বিশ্বকে পরিচালিত করছেন, আল্লাহর গুণাবলীকে এমনভাবে জানতে হবে যাতে করে আমরা সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর সৃষ্টির গুণাবলীর মধ্যে পার্থক্য নিরুপন করতে সক্ষম হই। যার ফলে কোনগুলো আল্লাহর গুণাবলী আর কোনগুলো সৃষ্টির গুণাবলী সে সম্পর্কে আমাদের মনে কোন সন্দেহ থাকবে না এবং ইবাদত করতে হবে সরাসরি শুধুমাত্র সেই সৃষ্টিকর্তার জন্য। এই বিষয়টিকে আমাদের গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। যার ফলে আমরা কখনই এমন কারো ইবাদত করবো না যেখানে সেই ইবাদত বা উপাসনা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কোন সৃষ্টিকে আমরা আল্লাহ তাআলার গুণাবলী দিয়ে ভূষিত করবো না যদিও এই বিষয়টি বিভিন্ন উপায়ে সংগঠিত হতে পারে। আবার অনেক সময় আমরা কোন সৃষ্টিকে আল্লাহ তাআলার গুণাবলী দিয়ে ফেলি নিজের অজান্তেই।
যার উৎকৃষ্ট একটি উদাহরণ হচ্ছে, আইনস্টাইনের ‘থিওরী অব রিয়েলিটিভিটি’। এই থিওরীটি হচ্ছে E=mc2 এখানে Energy (E) বা শক্তি = বস্তু এবং আলোর গতির দ্বিগুণ। আর এটি এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে যে, শক্তি বা বস্তু সৃষ্টি করা যায় না বা ধ্বংসও করা যায় না। যেখানে বস্তু শক্তিতে রুপান্তরিত হয় আবার শক্তি বস্তুতে রুপান্তরিত হয় আর এটা হচ্ছে একটি অবিরাম প্রক্রিয়া। কিন্তু এই তত্ত্বটিকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয় তা একটি শিরক! সূত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়, শক্তি বা বস্তুকে সৃষ্টিও করা যায় না আবার ধ্বংসও করা যায় না যা এই শক্তি বা বস্তকে যে সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে অস্বীকার করা হয়। বলা হয়, শক্তিকে সৃষ্টি করা যায় না কিন্তু শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন একমাত্র এ গুণের অধিকারী। কাজেই যখন আমরা বলি শক্তিকে সৃষ্টি করা যায় না তখন আমরা শক্তিকে আল্লাহর বৈশিষ্ট্যে গুণান্বিত করি। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “ওয়া হুয়া খালাকা কুল্লি শাইয়িন” অর্থাৎ তিনি সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন। আবার, যখন আমরা বলি, শক্তিকে ধ্বংস করা যায় না তখন আবার আমরা আল্লাহর বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করি। কারণ আল্লাহ তাআলাই একমাত্র যিনি কখনও ধ্বংস হবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “কুল্লিমা আলাইহা ফানিন” অর্থাৎ এই বিশ্বের সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এটাই হচ্ছে বাস্তব। কাজেই একজন মুসলিম যখন এই রকম থিওরী শিখবে বা শিখাবে তখন তাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। সে শুধু এটুকুই গ্রহণ করতে পারবে যে, মানুষ শক্তিকে ধ্বংস বা সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু বিষয়টিকে যদি এইভাবে না নিয়ে খোলাখুলিভাবে নেওয়া হয় যেখানে শক্তিকে ধ্বংস বা সৃষ্টি করা যায় না তাহলে এটা শিরক হয়ে যাবে। কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৈজ্ঞানিক এমন অনেক কিছুই আমরা ব্যাখ্যা করার জন্য গ্রহণ করছি যাতে শিরক অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। আর এই শিরকের বিষয়টি বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও বিদ্যমান, সোসিওলজি তথা সমাজ-বিজ্ঞানেও এই শিরক অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

এখন সঠিক উপায়ে সৎকর্ম নিয়ে আমরা আলোচনা করব। সঠিক উপায়ে সৎকর্ম দুইটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত যাদের মধ্যে একটি হচ্ছে জিকরুল্লাহ বা আল্লাহর স্মরণ। যার মানে হচ্ছে যখন কেউ একজন সৎকর্ম করবে তখন সে কাজটি করবে আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার প্রত্যয়ে। সে আল্লাহকে স্মরণ করবে যার ফলে তার সৎকর্মটি হবে আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে এবং আল্লাহর স্মরণই হচ্ছে সকল প্রকার ভালকাজের মূল। সৎকর্ম অর্থাৎ প্রকৃত সৎকর্ম যেটি আল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত সেই সৎকর্মটি করতে হবে আল্লাহকে স্মরণ করে। আমরা যদি ইসলামে মূল ভিত্তিগুলোর দিকে লক্ষ্য করি তাহলে আমরা দেখতে পাব আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, উদাহরণ স্বরুপ আমরা নামাজের কথা বলতে পারি, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, “আক্বিমুসসালা লি জিকরী” অর্থাৎ আমাকে স্মরণ করার জন্য নামাজ প্রতিষ্ঠা কর। দৈনিক পাঁচওয়াক্ত নামাজের মূল বিষয়ই হচ্ছে আল্লাহ তাআলার স্মরণ। কাজেই ব্যক্তি যখন আল্লাহকে স্মরণ করে সৎকর্ম করবে তখন সেই সৎকর্মটি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে এবং যখনই সে আল্লাহর স্মরণকে ভুলে যাবে তখনই সে পাপকর্ম করবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বলেছেন, যখনই তারা আল্লাহর স্মরণ করতে ভুলে গেছে তখনই শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে আর যার ফলশ্রুতিতে তারা বিভিন্ন পাপকর্মে লিপ্ত হয়ে পরে। সুতরাং আল্লাহকে স্মরণ করা হচ্ছে সৎকর্ম সম্পাদন করার একটি প্রধান মৌলিক বিষয়।

দ্বিতীয় প্রধান বিষয়টি হচ্ছে, সৎকর্মটি করতে হবে সেই পন্থায় যে পন্থায় আল্লাহর রাসূল সম্পাদন করেছেন। এই সুন্নাহ বা রাসূলের কর্মনীতি আমাদের নিশ্চিত করবে যে আমরা যে সৎকর্মটি করছি তা আল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত। কারণ, যদি ইবাদত করার পন্থা যদি আমাদের উপর ছেড়ে দেওয়া হতো তাহলে আমরা বিভিন্ন উপায়ে আল্লাহর ইবাদত করার পন্থা আবিস্কার করতাম আর আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। আর ঠিক এই বিষয়টি আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মগুলোর মধ্যে দেখতে পাই। মানুষজন আল্লাহকে উপাসনা করছে বিভিন্ন পন্থায় যদিও এই পন্থাগুলো আল্লাহর নির্দেশিত বা আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়নি। বরং এই পন্থাগুলো হচ্ছে মানুষের আবিস্কার। রাসূলের পন্থায় সৎকর্ম করার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হই যে তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হচ্ছে বা সেই সৎকর্মটি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করছে। উদাহরণ স্বরুপ আমরা নামাজের কথা বলতে পারি। যখন কোন খ্রিস্টিয়ান আপনাকে নামাজ পরতে দেখবে তখন সে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে তুমি কেন এগুলো করছো? একবার মাথা নীচু করছ আবার মাটিতে মাথা ঠেকাচ্ছ। এটাকি যথেষ্ট নয় যে শুধুমাত্র হাটুর উপর ভরদিয়ে হাতদুটোকে এরকম করে ধরে উপাসনা করা? কিন্তু আপনি যদি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কোথা থেকে এই নিয়ম শিখলে? ঈসা (আ) কি তোমাদের এরকম করে উপাসনা করতে বলেছেন? তিনি কি বলেছেন, তোমাদের হাটুর উপর ভর দিতে হবে এবং তোমাদের হাতদুটোকে এরকম করতে হবে? এই উপাসনা করার নিয়মকি তোমরা ঈসা (আ) এর শিক্ষা তথা কর্মনীতি থেকে পেয়েছ? প্রকৃতপক্ষে এরকম নিয়ম ঈসা (আ) শিক্ষা দেননি। এরকম কোন নিয়মের অস্তিত্বই নেই। আপনারা বাইবেলে দেখতে পাবেন, ঈসা (আ) বর্ণনা করছেন, তিনি তার সাথীদের পিছনে রেখে বাগানে এগিয়ে গেলেন এবং আরো কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে তিনি মাটিতে মাথা ঠেকালেন এবং প্রার্থনা করলেন অর্থাৎ তিনি সিজদা করেছেন। আপনারা ওল্ড টেস্টমেন্ট (তওরাত) এ দেখতে পাবেন, মুসা (আ) মাটিতে মাথা ঠেকালেন এবং প্রার্থনা করলেন, ইব্রাহিম (আ) মাটিতে মাথা ঠেকালেন এবং প্রার্থনা করলেন। সকল নবীই এভাবে উপাসনা করেছেন আর এটাই হচ্ছে নবীদের সুন্নাহ তথা কর্মনীতি। কিন্তু মানুষ যখনই এই সুন্নাহ থেকে দূরে সরে গেছে তখনই তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে।
আবার তারা আপনাদের জিজ্ঞাসা করবে, তোমাদের নারীরা কেন এমন পুরো শরীর ঢেকে রাখে? এখন আপনারা যদি বলেন, তোমরা কি চার্চে ঐ ছবিটা লক্ষ্য করনি যেখানে ঈসা (আ) এবং তার সাথীদের ছবি রয়েছে আর সেখানে মরিয়ম (আ) কে কিভাবে আঁকা হয়েছে? তিনি একই রকম পোষাক পরে আছেন যেরকম আমাদের নারীরা পরে, পুরো শরীর ঢেকে রাখা কিন্তু তোমরা ঢেকে রাখছ না, কেন? কিন্তু এইভাবে নারীদের শরীর ঢেকে রাখাটাই ছিল ঈসা (আ) এর শিক্ষা। কিন্তু তোমরা এই সুন্নাহ থেকে দূরে সরে গেছ। খ্রিস্টানদের মধ্যে নানরা এই রকম ঢেকে পোষাক পরতো। ক্যাথলিক খ্রিস্টানে নান বলা হয় তাদেরকে যারা জিসাসকে বিয়ে করে, অর্থাৎ তারা এই পৃথিবীর কোন পুরুষকে বিয়ে করে না। আপনারা যদি পূর্বের নানদের লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন ঠিক সেইভাবে পোষাক পরতো যেভাবে মরিয়াম (আ) পরতেন, পুরো শরীর ঢেকে রাখা। কিন্তু বর্তমানে তারা সেভাবে পোষাক পরছে না, তাদের পোষাক পূর্বের তুলনায় ছোট হয়ে গেছে। কারণ, এই মানুষগুলো ঈসা (আ) এর সুন্নাহকে অনুসরণ করার অঙ্গীকার করেনি। যার ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, সঠিক পথ থেকে বিচ্চুত হয়ে গেছে।

সুতরাং এর মাধ্যমে যে প্রধান বিষয় দুইটি পেলাম তা হলো, আমাদের বিশ্বাস অবশ্যই সঠিক হতে হবে এবং আমাদের সৎকর্মগুলোও সঠিক পন্থায় হতে হবে অর্থাৎ যে পন্থায় করলে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন। সঠিক বিশ্বাস নির্ভর করবে আল্লাহ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট জ্ঞান, যার মাধ্যমে সৃষ্টি এবং সৃষ্টিকর্তাকে পৃথক করতে পারব। আর আমরা একমাত্র আল্লাহ তাআলাকেই ইবাদত করবো। সঠিক সৎকর্ম নির্ভর করে, আল্লাহর স্মরণ এর উপর এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরর সুন্নাহ এর উপর অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে সৎকর্মটি করেছেন আমাদেরকেও সেভাবে করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো, পূর্বের নবী-রাসূলদের সুন্নাহকে সংরক্ষিত করা হয়নি কারণ তারা প্রেরিত হয়েছিলেন নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী বা নির্দিষ্ট কতগুলো মানুষদের জন্য, নির্দিষ্ট একটি জায়গা এবং নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন শেষ নবী এবং তাঁর সুন্নাহই হচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষদের জন্য প্রযোজ্য। কুরআন অধ্যায়ন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ চর্চা করার মাধ্যমে ইনশাল্লাহ আমরা সঠিক বিশ্বাস এবং সঠিক উপায়ে সৎকর্ম করতে সক্ষম হবো। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সহায় হোন। আমীন।

(এই লেখাটি ড. আবু আমেনা বিলাল ফিলিপের Faith and Righteous Deeds লেকচারের অনুবাদ)
লেখাটি অনেক বড়, তাই লেখাটির ই-বুক ডাউনলোড করেও আপনারা পড়তে পারেন।
ই-বুকটি ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২৯০ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

১ টি মন্তব্য

  1. আসসালামু আলাইকুম,
    ই-বুক ডাউনলোড লিংকটি ঠিকমতো কাজ করছিল না, এখন ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, ইনশাল্লাহ এখন ডাউনলোড করতে কোন সমস্যা হবে না।
    ই-বুকটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন