লগইন রেজিস্ট্রেশন

***বিশ্বাস এবং সৎকর্মঃ প্রথম পর্ব***

লিখেছেন: ' manwithamission' @ মঙ্গলবার, জুন ১৫, ২০১০ (১০:২৮ পূর্বাহ্ণ)

বিশ্বাস এবং সৎকর্ম
ড. আবু আমেনা বিলাল ফিলিপ

সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য এবং আল্লাহ তাআলার শান্তি ও রহমত শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং যারা মৃত্যর পূর্ব পর্যন্ত সঠিক পথে অবিচল থাকে তাদের উপর অর্পিত হোক। আজকের আলোচনার বিষয়টি হচ্ছে, “ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস”। সাধারণত ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই আমরা ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তি বা খুঁটির উপর প্রতিষ্ঠিত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করি যেমন: সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত(নামাজ), যাকাত, সাওম(রোজা) এবং হজ্জ্ব। আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করব না তবে এই মৌলিক বিশ্বাসগুলো পিছনে যে প্রধানতম বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। কাজেই আজকের আলোচনার সারমর্ম হিসেবে দুইটি বিষয় উল্লেখ করতে পারি আর তা হচ্ছে বিশ্বাস এবং সৎকর্ম।

বিশ্বাস এবং সৎকর্ম ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্বাস এবং সৎকর্ম একে অপরের সাথে জড়িত অর্থাৎ একটিকে অপরটি থেকে পৃথক করার কোন উপায় নেই। মৌলিক বিশ্বাসগুলোর প্রথম খুঁটিটিই হচ্ছে সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া। সত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মুসলিম কমিউনিটির অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কেউ ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল।

আমরা এই সত্যের সাক্ষ্যটি প্রকাশ্যে দেই আর গোপনে দেই তাতে প্রমাণ হবে না আমাদের বিশ্বাস আছে কি নেই, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস একজনের অন্তরে অবস্থান করে। তবে, কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করতে চায় তখন তাকে প্রকাশ্য সাক্ষ্য দিতে হয় যার ফলে মুসলিম কমিউনিটি বুঝতে পারে সে ব্যক্তি এখন থেকে মুসলিম কমিউনিটির অন্তর্ভূক্ত। এই প্রকাশ্য সাক্ষ্যটি যে দেয় তা তার নিজের এবং মুসলিম কমিউনিটি উভয়ের লাভের জন্যই। কারণ, কেউ যদি সত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়টি গোপন করে রাখে তখন সে নানাবিধ বিপর্যয়ে পরতে পারে যেমন: সে হয়তো কোন একটি ইবাদত করতে যাবে তখন সে বাধাগ্রস্থ হতে পারে, শয়তান তাকে বিভিন্ন কুমন্ত্রণা দিবে আর যার ফলে সে হয়তো মনের মাঝে দূর্বলতা অনুভব করবে কিংবা সেই ইবাদত থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু সে যদি মুসলিম কমিউনিটিকে জানিয়ে রাখে যে সেও তাদের একজন এবং কোন ইবাদত করা থেকে বিরত হয় তখন মুসলিম কমিউনিটি তাকে জিজ্ঞেস করবে, কি ব্যাপার? তুমি এই ইবাদতটি করছ না কেন? বা সে বিপদে পরলে মুসলিম কমিউনিটি তাকে সাহায্য করবে। কাজেই সত্যের সাক্ষ্যটি যখন মুসলিম কমিউনিটি জানবে তখন তারা তার সৎকর্মের সাক্ষ্যি হবে, তাকে বিভিন্ন সৎকর্ম করতে সাহায্য করবে। আর যার কারণেই প্রকাশ্যে সত্যের সাক্ষ্য দিতে হয়।

এই সত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার পরই আমরা বাকি চারটি ইসলামের ভিত্তি আমাদের উপর অর্পিত হয় সেগুলো হল, প্রত্যেক দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, বছরে একবার যাকাত দেওয়া, রমাদান মাসে রোজা রাখা এবং বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘরে হজ্জ্ব করা। কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রধান পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে সত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়টি প্রধানতম বিষয়। এই সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া তথা ঈমান আবার ছয়টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বলেছেন: আল্লাহর উপর বিশ্বাস, নবী-রাসূলদের উপর বিশ্বাস, আসমানী কিতাব সমূহের উপর বিশ্বাস, ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস, পরকালের উপর বিশ্বাস এবং তাকদীরের উপর বিশ্বাস। ঈমান এই ছয়টি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত আর এগুলো হচ্ছে প্রধানতম বিষয় অর্থাৎ এগুলোর উপর আমাদের বিশ্বাস থাকতেই হবে। কিন্তু শুধুমাত্র এগুলো উপর বিশ্বাস করলেই হবে না, আমাদের এমন কাজ করতে হবে যার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হবে যে আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত। এই বিষয়টি সূরা আছরের মধ্যে সারমর্ম হিসেবে দেওয়া আছে। যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে কিন্তু তারা ব্যতীত যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকর্ম করে। সুতরাং এই বিষয়টি পরিস্কার যে, মানুষ এই পার্থিব জীবনে যাই অর্জন করুক না কেন, যত খ্যাতি-প্রতিপত্তি, সম্পদ অর্জন করুন না কেন সে তা হারিয়ে ফেলবে কিন্তু তারা ব্যতীত যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকর্ম করে।

এই বিশ্বাস এবং সৎকর্মের বিষয়টি আমরা এইভাবে দেখতে পারি যেমন:
*সৎকর্ম এবং বিশ্বাস
*বিশ্বাস ব্যতীত সৎকর্ম
*সৎকর্ম ব্যতীত বিশ্বাস
*সঠিক উপায়ে সৎকর্ম ব্যতীত বিশ্বাস

বিশ্বাস ব্যতীত সৎকর্মঃ
এখন প্রথমেই আমরা সৎকর্মটি নিয়ে আলোচনা করব। যদি আমরা বিশ্বাস ছাড়া সৎকর্ম করি তখন সেই সৎকর্মটি পরকালে আমাদের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না। কারণ এই সৎকর্মটি করা হবে বস্তুবাদী প্রয়োজনের জন্য, সেই এই সৎকর্মটি করবে বস্তুবাদী কোন কিছু অর্জন করার জন্য। সে আপনার সাথে ভাল ব্যবহার করবে কারণ সে আপনার কাছে এমন কিছু আশা করবে যা তার প্রয়োজন। আপনার সাথে ভাল ব্যবহার করার কারণে সেই ব্যক্তিটি ধীরে ধীরে আপনার বন্ধু হয়ে উঠবে এবং এক পর্যায়ে আপনি তাকে অনুমতি দিয়ে দিবেন, প্রয়োজনে তুমি এটা ব্যবহার করতে পার। উদাহরণ স্বরুপ আমরা বলতে পারি, আপনি যদি পশ্চিমা কোন শপিং মলে কাজ করতে যান তখন তারা প্রথমেই আপনাকে ট্রেনিং দিবে। তাদের ট্রেনিং এর প্রধানতম একটা বিষয় হচ্ছে যে, কাউন্টারে যখন ক্রেতা আসবে তখন ক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে আপনাকে হাঁসতে হবে। আপনার যতই সমস্যা থাকুক না কেন, আপনার যতই বিপদ থাকুক না কেন আপনি যখনই শপিং মলে আসবেন তখনই আপনার মুখে হাঁসি ফুটিয়ে তুলতে হবে, ক্রেতাদের উদ্দেশ্য করে হাঁসতে হবে। এটাই হচ্ছে বস্তুাবদী স্বার্থ অর্থাৎ আপনি ক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে হাঁসছেন তার মানে এই না যে আপনি নিজেও আনন্দ অনুভব করছেন। আপনার হাঁসার উদ্দেশ্যে হচ্ছে সে ব্যক্তিটি যেন পুনরায় আবার আপনাদের শপিং মলে আসে এবং আরো কেনাকাটা করে। কিন্তু অপরকে উদ্দেশ্য করে হাঁসা একটি সৎকর্ম, কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি তোমার ভাইকে উদ্দেশ্য করে হাঁসবে তখন তুমি একটি সৎ কর্ম করলে। এখন আপনি যখন হাঁসছেন তখন আপনি এই উদ্দেশ্যে হাঁসছেন না যে আপনি একটি সৎকর্ম করছেন বরং আপনি হাঁসছেন যাতে করে ক্রেতাটি আন্তরিক পরিবেশ অনুভব করে এবং পুনারায় সেখানে কেনাকাটা করতে আসে। অর্থাৎ ক্রেতা আসলেই আপনাকে হাঁসতে হবে। আর এটা হচ্ছে একটা সৎকর্ম কিন্তু যেখানে বিশ্বাস অনুপস্থিত। আর এ কারণেই এই রকম সৎকর্মের কোনই মূল্য নেই। আল্লাহ এই ধরণের সৎকর্ম গ্রহণ করবেন না এবং যে ব্যক্তি এই রকম সৎকর্ম করবে সেও কোন সওয়াব বা পুরস্কার পাবে না। একইভাবে একজন ব্যক্তি একটি সৎকর্ম করল কিন্তু তার মাঝে যদি সঠিক বিশ্বাস না থাকে বা তার বিশ্বাস বিকৃত হয়ে যায় তাহলে পরিশেষে দেখা যাবে সে যেকোন একটি উপায়ে Idolatry বা মূর্তিপূজার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত করার পরিবর্তে সে মূর্তিপূজা শুরু করবে। কিন্তু সে মনে করবে সে আল্লাহর ইবাদত করছে আর আমি বলছি না সে ইচ্ছা করে মূর্তিপুজা করছে কিন্তু পরিশেষে সে এটাই করবে। সে বিশ্বাস করবে সে আল্লাহর ইবাদত করছে।

আপনারা জানেন এবং আপনারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে দেখা করে থাকেন। তাদের মধ্যে হয়তো কেউ খ্রিস্টান, কেউ হিন্দু, কেউ বুদ্ধিস্ট। আপনি দেখবেন তাদের অনেক দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে কিন্তু তাদের এই বিশ্বাস সঠিক নয় আর যার ফলে পরিশেষে তারা মূর্তিপূজা করে। তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করছে কিন্তু তারা মনে করছে তারা আল্লাহকেই উপাসনা করছে। এটাই হচ্ছে সঠিক বিশ্বাস ব্যাতীত সৎকর্ম । উদাহরণ স্বরুপ আমরা খ্রিস্টানদের কথা বলতে পারি, যদি আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কেন ঈসা (আ) এর উপসনা কর? তারা বলবে, আমরা ঈসা (আ) এর মানব আকৃতিকে উপাসনা করি না কিন্তু আমরা উপাসনা করি ঈশ্বরের যিনি মানব আকৃতিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এটা হচ্ছে ঈসা (আ) কে উপসনা করার একটি প্রতরণা পূর্ণ যুক্তি যা তারা জিসাসকে উপসনা করার ব্যাখ্যা হিসেবে বলে থাকে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা একজন মানুষকেই উপসনা করছে। এটাই হচ্ছে Idolatry। একইভাবে আপনি যদি কোন শিক্ষিত হিন্দুকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কেন এই মূর্তিগুলোর পূজা কর? সে বলবে, তুমি যে মূর্তিটি আমার সামনে দেখছ আমি তো তার উপাসনা করছি না, আমি উপাসনা করছি বিশ্বের সৃষ্টিকর্তাকে যিনি সকল সৃষ্টির মধ্যে উপস্থিত, আমি উপাসনা করছি এই মূর্তিরটির মধ্যে উপস্থিত সৃষ্টিকর্তাকে, আর আমি জানি এই মূর্তিকে যদি আঘাত করি তাহলে এটা ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং আপনারা দেখলেন সে কি যুক্তি ব্যবহার করছে। সে বিশ্বাস করছে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর উপাসনা করছে। যার শেষ ফলাফল হচ্ছে সে একটি মূর্তির নিকট মাথা নীচু করছে আর এটাই হচ্ছে সঠিক বিশ্বাস ব্যাতীত সৎকর্ম।

চলবে…..

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৮২ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

১ টি মন্তব্য

  1. [...] পূর্বে প্রকাশিতের পর…. বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম [...]