আমরা কেমন মুসলমান ?
লিখেছেন: ' আবু আব্দুল্লাহ' @ শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১১ (৭:৫৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদা সুলতানা রুমী
ফারজানা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরল, ‘কেমন আছিস?’ হাসি মুখে ‘ভালো আছি’ বলে ওকে ধরে সোফায় বসালাম। বললাম ‘তারপর তুই কেমন আছিস? বাচ্চারা কেমন আছে? প্রফেসর সাবেব কেমন আছেন?
‘সব ভালো- সব ভালো’ বলে কণ্ঠস্বর একটু নিচু করে আবার বলল,‘বাসায় অনেক লোকজন মনে হচ্ছে। মেহমান এসেছে বুঝি? বললাম ‘হ্যাঁ আমার ভাসুর, জা, আর তাদের ছেলে মেয়ে…’
কথা শেষ করতে না দিয়ে ফারজানা বলল, এই সব মেহমানের জন্য তোর বেপর্দা হয় না? তোর ভাসুরের ছেলে কতো বড়?’ বললাম, ‘এই ১৫/১৬ বছর হবে। এবার এস.এস.সি দেবে।’ ‘তাহলে তো বেশ বড়। এত বড় ছেলে- তা আবার গ্রামের ছেলে। যখন তখন হুট করে ঘরে ঢুকে পড়ে না? বললাম, ছেলে তো ছোট মানুষ। আমার ভাসুর ও পর্দার ব্যাপারটা ঠিক মতো বোঝে না। সেও যখন তখন ঢুকে পড়ে। আমাকেই একটু সাবধান হতে হচ্ছে।’
‘ও তাই বুঝি এতো ঢোলা ফুল হাতা ম্যাস্কি পড়ে আছিস?’
বললাম, ‘হ্যাঁ, আত্মীয় স্বজন তো আসবেই। তাদের আদর যত্নও করতে হবে। আমার ভাসুর তো আবার আমি তুলে না দিলে খেতেই চায় না।
ফারজানা ঠোঁট উল্টিয়ে বেশ গর্বের সাথে বলল, ‘ঐ সব আব্দার আমার কাছে নেই। আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে কারো সাথে আমার খাতির নেই। সেদিন কি হয়েছে শোন বলে, যে কাহিনী আমাকে শোনালো, আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম।’ ঘটনা এই রকমÑ ফারজানার ছোট ননদের স্বামী তার এক বন্ধুকে নিয়ে ফারজানাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। বছর খানেক হলো বিয়ে হয়েছে। ভদ্রলোক উপজেলা শহরের এক কলেজের প্রভাষক। অফিসিয়াল কাজে জেলা শহরে এসেছে। সেই সুবাদে ফারজানাদের বাসায়। কলিংবেলে নক করতেই ফারজানার মেয়ে দরজা খুলে দেয়। বন্ধুকে ড্রইংরুমে বসিয়ে রেখে ভদ্রলোক বড় এক ব্যাগ আপেল আর কমলা নিয়ে বাসার ভেতর ঢুকতেই ফারজানার সামনা সামনি হয়ে যায়। ননদাই সালাম দিয়ে হাসিমুখে ফলের ব্যাগটা ফারজানার দিকে এগিয়ে ধরতেই ফারজানা ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতো ফলের ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর গর্জন করে ওঠে, ‘বেঈমানের বাচ্চা তোর ফল খাওয়ার জন্য আমি বসে আছি নাকি? তুই বাসার ভেতর ঢুকলি ক্যান? তুই আমাকে বেপর্দা করলি ক্যান? তোর মতো আত্মীয় আমার দরকার নেই। এই মুহূর্তে আমার ঘর থেকে বের হয়ে যা।’ ননদাই একটা কথারও জবাব দেয় নি। মাথা নিচু করে বন্ধুর হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ফারজানার ভাষায়,‘ ছোড়ার মুখে আর কথা নেই। মুখ চুন করে বন্ধুর হাত ধরে বেড়িয়ে গেছে।’ হাসতে লাগলো ফারজানা বিজয়নীর মতো শোন, ওর বন্ধু বলছে কি হয়েছে, ছোড়া বলে কিনা আমার ভাবীর মাথায় একটু ছিট আছে। মাঝে মাঝে বাড়ে। এখন তার বাড়তি সময়। এই সময় সে কাউকে চেনে না। আমি এবার হেসে ফেললাম। বললাম, ‘ তার মানে বন্ধুর কাছে প্রমাণ করেছে তুই পাগল।’ হ্যাঁ। কতো বড় বদমাইশ দেখলি তো?
বললাম, ‘তা কথাটা কিন্তু ঠিকই বলেছে তোর ননদাই। তোর আচরণটা পাগলের মতোই হয়েছে। বন্ধুর কাছে এই কথা বলা ছাড়া তোর ননদাইÑএর তো আর উপায় ছিল না। তোর এই ননদাই আর জীবনে তোর বাসায় আসবে?
‘না আসুক। তাই বলে ঘরের মধ্যে আমি কি অবস্থায় না কি অবস্থায় আছি তা না জেনেই হুট করে আমার ঘরে ঢুকে পড়বে?
ফারজানা যে পর্দা দেখালো ইসলাম তাকে এভাবে পর্দা করতে বলেনি। পর্দার নামে নিশ্চয়ই আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শিক্ষা ইসলাম দেয় না। আমি পরে খবর নিয়ে জেনেছি ফারজানার ঐ আচরণে তার শ্বশুর শাশুড়ি অত্যন্ত মন খারাপ করেছে। ফারজানা তার স্বামীর পক্ষের কোনো আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যায় না। তাদের বিয়ে শাদী বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানেও যায় না। কারণ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গেলে তার নাকি পর্দা রক্ষা হয় না । এই দিকের কারো সাথেই ফারজানার সুসম্পর্ক নেই। তারা ফারজানাকে ঘৃণা করে-ফারজানাও তাদের ঘৃণা করে।
ফারজানার ননদাই ‘আসেমের’ আচরণ থেকেও বোঝা গেছে ইসলামী বিধান সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। কারো বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নিয়মও ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে, গৃহে ঢোকার আগে গৃহবাসীকে ছালাম দেওয়া ও গৃহবাসীর অনুমতি নেওয়া ইসলমের নির্দেশ। এই নির্দেশ আসেম মানে নি। আমাদের দেশের শতকার ৯৮ জন মুসলমানই এই রকম। এদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হলে এরা অবলীলায় বলে দেবেন, ‘কি জানি? আমরা অতসব জানি না। ’ এই না জানার মধ্যে তাদের কোনো লজ্জাও নেই। কিন্তু ফারজানা? ফারজানারা তো ইসলামের ধারক বাহক হয়ে আছে। ওরা যা করে ইসলামের নামেই করে। ওরা যদি দোষ করে সে দোষ ইসলমের হয়। ওরা যা কিছু ভালো করে সে প্রশংসাও ইসলামের হয়। এদের ব্যবহারে এদের আচরণে মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে এমনই তো কথা ছিল।
কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে তার বিপরীত। পাড়া প্রতিবেশী দুরে থাকুক, আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনেরাই আমাদের পছন্দ করে না । দীর্ঘশ্বাসের সাথে বুক চিরে বের হয়ে আসে- “আমরা কেমন মুসলমান?”
ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান মেনে চললেই এমন সমস্যা হবেনা । এজন্য আমাদের উচিৎ আগে ইসলামের বিধান গুলি ভাল করে জেনে নেয়া।