লগইন রেজিস্ট্রেশন

সংক্ষেপে ঈমানের পুর্বশর্তসমূহ

লিখেছেন: ' আবু আনাস' @ শুক্রবার, জানুয়ারি ১, ২০১০ (৯:৫২ অপরাহ্ণ)

আস-সালামু আলাইকুম, সকল প্রশংসা আল্লাহ’র জন্য, শান্তি অবতীর্ণ হোক মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি। পরম করুণাময়-দয়াশীল আল্লাহ’র নামে শুরু করছি -

ইসলামের প্রথম স্তম্ভ হ্ল – ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ এই সাক্ষ্য দেয়া। এই ঘোষণা দেবার পর ঘোষণাকারী মুসলিম বলে বিবেচিত হবেন এবং তার জান-মাল অন্য মুসলিমদের জন্য হারাম হয়ে যাবে। নিজেকে মুসলিম দাবীকারী কোন ব্যক্তি যদি ইসলামের বাহ্যিক আচরণগুলো (rituals) পালন করেন এবং প্রকাশ্যে ইসলাম বিধ্বংসী কোন কথা বা কাজের উপর অটল অবস্থান না নেন তবে তাকে কাফির বলা যাবেনা। এমন ব্যক্তির অন্তরে যা আছে তার জন্য তিনি আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করবেন, মানুষ তাঁর ব্যপারে কোন সিদ্ধান্ত দেবেনা। অন্যায় ও পাপের ব্যপারে তাঁর বিরোধীতা করা যাবে, তাকে সৎ উপদেশ দিতে হবে এবং একজন মুসলিম হিসেবে তাঁর সুপথ প্রাপ্তির জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করতে হবে।

কেউ যদি শুধু মুখে “লা ইলাহা ইল্লালাহ” সাক্ষ্য দেয় তবে সে জান্নাতে যাবেই এমন ধারণাটি সঠিক নয়। এর প্রমাণ মদিনার মুনাফিকরা, যারা মুখে “লা ইলাহা ইল্লালাহ” সাক্ষ্য দেবার পরেও তাদের জন্য জাহান্নামের নিম্নতম স্তর অনন্তকালের জন্য নির্ধারিত করা হয়ছে।

কুর’আন ও সহীহ হাদিস বিশ্লেষন করলে সাক্ষ্য দেয়ার কিছু শর্ত পাওয়া যায় যা পূরণ না করে শুধু “লা ইলাহা ইল্লালাহ” সাক্ষ্য দিলেও সে প্রকৃত মুসলিম হিসেবে গণ্য হবেনা।

প্রথম শর্তঃ সাক্ষ্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকা।

আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই – একথা দ্বারা কী নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং কোন কোন বিষয় অস্বীকার করা হচ্ছে তা সম্পর্কে সুস্পস্ট ধারণা থাকতে হবে। বাস্তব জীবনেও লক্ষ্য করা যায় কোন বিষয়ে বক্তব্য দিতে হলে সে বিষয় সম্পর্কে ন্যুনতম জ্ঞান থাকতে হয়। আর সাক্ষ্যের মত গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে অবশ্যই পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা কামনীয়।

মহান আল্লাহ বলেন –

“ সুতরাং জেনে রেখো আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নর-নারী দের ত্রুটির জন্য ” [সুরা মুহাম্মাদ, ৪৭- ১৯]

“….. তবে যারা সত্য উপলব্ধি করে সাক্ষ্য দেয় তারা ব্যতীত” [সুরা যুখরুফ, ৪৩- ৮৬]

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন –
“ আল্লাহ ব্যতীত ইবাদাতের যোগ্য কেউ নেই একথা জেনে যে মারা গেল সে জান্নাতে যাবে। ” [সহীহ মুসলিম]

দ্বিতীয় শর্তঃ সাক্ষ্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিশ্চিত ও সন্দেহমুক্ত হওয়া ।

নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করবার আগে আল্লাহর অস্তিত্ব ও প্রভুত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত ও সন্দেহমুক্ত হওয়া আবশ্যক। সন্দেহ থেকে মুক্তির উপায় হল আল্লাহর অস্তিত্ব ও প্রভুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা – তা অধ্যায়নের মাধ্যমে হোক বা আল্লাহর নিদর্শনগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার মাধ্যমেই হোক।

মুনাফিকদের ব্যপারে মহান আল্লাহ বলেন -

“…যারা আল্লাহ এবং শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করেনা এবং যারা অন্তরে সন্দেহ অনুভব করে। আর তাই সে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তারা দ্বিধাগ্রস্থ হয় ” [সুরা তওবা, ৯- ৪৫]

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন –
“এমন কেউ নেই যে “আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই ও আমি আল্লাহর রসুল” – এই ঘোষণা সহ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে এবং এই ঘোষণা সম্পর্কে কোন সন্দেহ রাখবেনা – অথচ সে জান্নাতে যাবেনা” [সহীহ মুসলিম]

তৃতীয় শর্তঃ সাক্ষ্যের বিষয়বস্তু জিহ্বা ও অন্তর দিয়ে কবুল করে নেয়া ।

প্রথম দুটো শর্ত পূরণ করলেও অনেক ক্ষেত্রে কবুলের বিষয়টি ইসলাম গ্রহণে বাধা দেয়। যেমন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথার সত্যতা স্বীকার করেও তাঁর যুগের ইয়াহুদিরা হিংসার বশবর্তী হয়ে বা তাঁর নিজের চাচা আবু তালিব বংশ মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে সাক্ষ্য উচ্চারণে বিরত থাকেন। কবুলের বিষয়টি মূলত এমন যে কুর’আনে যা কিছু আছে এবং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন সবকিছু নিঃশর্তে মেনে নেয়া।

মহান আল্লাহ বলেন -

“…তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামাতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে..” [সুরা বাকারা, ২-৮৫]

“ আল্লাহ ও তাঁর রসুল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে, কোন মু’মিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের কোন অধিকার থাকবেনা ” [সুরা আহযাব, ৩৩- ৩৬]

চতুর্থ শর্তঃ আত্মসমর্পণ করা।

‘ইসলাম’ শব্দের অনেকগুলি অর্থের একটি অর্থ হল নিজের চিন্তা-চেতনা, ভাললাগা-ভালবাসা, কামনা-বাসনা সবকিছুকে ত্যাগ করে, আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সকল আদেশ ও নিষেধ মেনে নেবার ও তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলন করার প্রস্তুতি না থাকলে মুখে সাক্ষ্য দেয়া অর্থহীন।

মহান আল্লাহ বলেন -

“ কিন্তু না, তোমাদের প্রতিপালকের শপথ! তাঁরা মুমিন হবেনা যে পর্যন্ত না তাঁরা তাদের বিবাদ-বিসংবাদের ভার তোমার উপর অর্পণ না করে। তারপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়। “ [সুরা নিসা, ৪- ৬৫]

পঞ্চম শর্তঃ আন্তরিক সততা বা বিশ্বস্ততা।

লোক দেখানো বা শুধু মাত্র বলার জন্য বললে “লা ইলাহা ইল্লালাহ” কাউকে মুসলিম করবেনা। আন্তরিক স্বীকৃতি হিসেবে এটি মানসিক সততার সাথে মুখে উচ্চারণ করতে হবে। পঞ্চম শর্তটি মুনাফিকি বা শঠতার বিপরীত ধারণা বহন করে।

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন –
“ এমন কেউ নেই যে বিশ্বস্ততা সহকারে তার মন থেকে সাক্ষ্য দিয়েছে যে – ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই’, অথচ আল্লাহ তাঁর জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করেননি। ” [সহীহ বুখারি]

ষষ্ঠ শর্তঃ উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আল্লাহ।

শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং তাঁর শাস্তি থেকে নিরাপত্তা পেতে মুসলিম হতে হবে। সামাজিকতা রক্ষা বা কোন স্বার্থ উদ্ধার করা ইত্যাদি অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকলে সাক্ষ্য উচ্চারণ করলেও তা ফলপ্রসু হবেনা। তাঁর মুসলিম হওয়া অর্থাৎ ইসলামের বিধি-নিষেধের কাছে মাথা নত করা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে। ষষ্ঠ শর্তটি শিরক্‌ বা অংশীদারিত্বের বিপরীত ধারণা বহন করে।

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন –
“ এমন কেউ যে বলে – ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই’, এবং যে তা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে বলে; আল্লাহ তাঁর জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন। ” [সহীহ মুসলিম]

সপ্তম শর্তঃ সাক্ষ্যকে মনেপ্রাণে ভালবাসা।

সাক্ষ্যকে ভালবাসার ব্যাখ্যা হল আল্লাহ, তাঁর রসুল, এই সাক্ষ্য যে জীবনদর্শন ও জীবনবিধান সূচনা করেছে তা এবং যাঁরা এই জীবনদর্শন ও জীবনবিধান নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করেছে তাদের ভালবাসা।

মহান আল্লাহ বলেন -
“…কিন্তু যারা ঈমান এনেছে তাঁরা আল্লাহর প্রতি ভালবাসায় সুদৃঢ়…” [সুরা বাকারা, ২-১৬৫]

অষ্টম শর্তঃ অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার করা।

‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ এই সাক্ষ্যবাক্যটি স্বয়ং সকল উপাস্যকে অস্বীকার করলেও এর সঠিক অর্থ না বুঝতে পেরে অনেক মুসলিম-ই আল্লাহর সাথে তিনি ব্যতীত অন্য যে কোন ব্যক্তি বা বস্তূর কাছে আশ্রয় কামনা করে বা সাহায্য চেয়ে ইসলামের গন্ডির বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। তাবিজের ভিতরে কুর’আনের আয়াত লিখে গলায় ঝুলানো বা পীরের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে মুক্তি চাওয়া এমন-ই কিছু নিরীহদর্শন পন্থা যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সাথে সাথে তাবিজ বা পীরকে ইলাহ বা উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করছে।

নবম শর্তঃ মৃত্যু অবধি সাক্ষ্যকে ধরে রাখা।

সাক্ষ্যের সকল শর্তগুলো আমৃত্যু ধরে রাখতে হবে – এটাই নবম ও শেষ শর্ত। পরকালে
‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ – এই ঘোষণার সুফল পেতে হলে মুসলিম হিসেবেই মৃত্যু বরণ করতে হবে। মৃত্যুর পূর্বে যদি কেউ সাক্ষ্যের অবশ্য পূরণীয় শর্তগুলো থেকে বিচ্যুত হয় তবে তার পূর্বের ভাল কাজ ব্যর্থ হয়ে যাবে।

মহান আল্লাহ বলেন –

“হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে এমনভাবে ভয় কর যেমন ভয় করা উচিত এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না” [সুরা আল-ইমরান, ৩- ১০২]

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
১৩৪ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)