লগইন রেজিস্ট্রেশন

***একটি ভুল ধারণার অপনোদন***

লিখেছেন: ' নোমান' @ বুধবার, মার্চ ১০, ২০১০ (৭:১৯ অপরাহ্ণ)

আমাদের অনেকের মাঝেই একটা ভুল ধারণা প্রচলিত হয়ে আছে। ভুল ধারণাটির উদ্ভব হয়েছে আয়াতটির প্রকৃত অর্থ না বুঝার কারণে। আয়াতটির ভুল অর্থ করা হয় এইভাবে, “তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আমাদের জন্য আমাদের ধর্ম”। কিন্তু বাস্তবে আয়তটির অর্থ মোটেও এটা বুঝায় না। আসলেই কি বুঝায় সেই বিষয়টিই আলোকপাত করব। ইনশাল্লাহ আমাদের ভুল ধারণাটি দূর হয়ে যাবে।

এই আয়াতটি হচ্ছে কুরআন শরীফের ১০৯ নং সূরা কাফিরুনের ৬ নং আয়াত যার প্রকৃত অর্থ হচ্ছেঃ

“তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে”।

এই সূরাটির সম্পূর্ণ অর্থ আর এর সরল ব্যাখ্যা হচ্ছেঃ
বলুন, হে কাফেরকুল!
এখানে কাফেরকুল দিয়ে এই পৃথিবীর জমিনে যত অবিশ্বাসী আছে তাদের সকলকেই বুঝানো হচ্ছে। যদিও এই সূরাটি নাযিল হয়েছিল তৎকালিন কুরাইশ অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্য করে। কুরাইশ সম্প্রদায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের মূর্তিগুলোকে এক বছর পূজা করতে আহবান জানায় যার বিপরীতে তারা এক বছর আল্লাহর ইবাদত করবে। এরপরই আল্লাহ তাআলা এই সূরাটি নাযিল করেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দেন ইসলাম যে তাদের ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ অন্যরকম তা পরিস্কার করে দেওয়ার জন্য।

আমি ইবাদত করিনা, তোমরা যার ইবাদত কর।
যার মানে হচ্ছে, মূর্তি এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমরা যে গুলোকে গড হিসেবে মান্য কর; আমি সেই মূর্তি এবং গডদের ইবাদত করি না।

এবং তোমরাও ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি
যার মানে হচ্ছে আল্লাহ তাআলা এক এবং একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি সেই আল্লাহর ইবাদত করি।

এবং আমি ইবাদতকারী নই, যার ইবাদত তোমরা কর।
যার মানে হচ্ছে, তোমরা যে পদ্ধতীতে ইবাদত কর আমি সেই পদ্ধতীর অনুসরণ করি না আর সেই ভাবে ইবাদতও করি না। আমি আল্লাহকে ইবাদত করি একমাত্র সেই পন্থায় যে পন্থা তিনি পছন্দ করেন এবং সন্তুষ্ঠ হন।

তোমরা ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি।
যার মানে হচ্ছে, ইবাদত করার ক্ষেত্রে তোমরা আল্লাহর হুকুম, আল্লাহর বিধান, আইন মান্য তো করই না অধিকন্তু ইবাদত করার পন্থা তোমরা নিজেরা নিজেদের অনুমান ও প্রবৃত্তি অনুযায়ী উদ্ভাবন করেছ। আল্লাহ তাআলা বলেন, “এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমদের পূর্ব-পুরুষেরা রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেন নি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্দেশ এসছে” (সূরা নাজমঃ ২৩)।
এই প্রথম পাঁচটি আয়াতের মাধ্যমে ইসলামের ইবাদত করার পন্থাটিকে একদম পরিস্কার করে তুলে ধরা হয়েছে। ইবাদতকারীকে অবশ্যই আল্লাহর অনুসারী হতে হবে এবং ইবাদতও করতে হবে যেভাবে আল্লাহ বিধান দিয়েছেন। আর এই জন্যই কালেমাটি এরকম, “আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কেউ ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল”। যার মানে হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় এবং আল্লাহকে ইবাদত করার পন্থা হচ্ছে যেভাবে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ইবাদত করতে বলেছেন অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে যে ইবাদত করেছেন সেই ইবাদত ঠিক সেভাবেই করতে হবে। মূর্তি পূজারীরা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের ইবাদত করে আর তা যে পন্থায় ইবাদত করে তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ কারণেই আল্লাহর নবী তাদের(কাফিরদের) বললেন,

তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে। (সূরা কাফিরুন : ১-৬)
এর চমৎকার ব্যাখ্যা আমরা এই আয়াতটি থেকে পাই, “আর যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে বল, আমার জন্য আমার কর্ম, আর তোমাদের জন্য তোমদের কর্ম। তোমাদের দায়-দায়িত্ব নেই আমার কর্মের উপর এবং আমরাও দায়-দায়িত্ব নেই তোমরা যা কর সে জন্য” (সূরা ইউনুসঃ ৪১)

তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।
এখানে কর্ম ও কর্মফলের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে আল্লাহর সন্তষ্ট পন্থায় তাদের কর্মফল আর যারা আল্লাহর ইবাদতে অংশীদার স্থাপন করে, ইবাদত করে নিজেদের অনুমান ও প্রবৃত্তি অনুযায়ী, এই দুইদলেরই কর্ম ফল ভিন্ন হবে। এই উভয় দলেরই বিচার দিবসে আল্লাহর সম্মুক্ষিণ হতে হবে। যারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করেছে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পন্থায় তারা সেদিন মুক্তি পাবে। আর যারা তা করে নি তারা সেদিন জাহান্নামে নিক্ষেপিত হবে।

যিনি বিচার দিনের মালিক (সূরা ফাতিহাঃ ৪)
অর্থাৎ বিচার দিনে এই উভয় দলকেই তাদের নিজস্ব কর্ম ফল নিয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে।

ইনশাল্লাহ, আমাদের মাঝে এই “তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আমার জন্য আমার ধর্ম” সম্পর্কিত ভুল ধারণাটি ভেঙ্গে যাবে। আর একটি কথা বলা অতি প্রয়োজনীয় মনে করছি আর তাহলো, কুরআনকে আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় ঠিক আরবীর মতো করে বুঝা সম্ভব নয়। অনেক ইসলাম বিদ্বেষীলোক ঠিক এই সুযোগটাই নিয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের মিথ্যা যুক্তির প্রমাণ দাড়া করাতে চায়। কিন্তু সত্যের একটা স্বভাব হচ্ছে তা প্রকাশিত হবেই হবে।
“বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল” (সূরা ইসরাঃ ৮১)

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাজত করুন। আমীন।

সংগ্রহ: http://www.somewhereinblog.net/group/islam/29071546

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৩৯৪ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৫ টি মন্তব্য

  1. স্বাগতম এই ব্লগে । সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ । তবে তফসীরকারকরা এই আয়াতের কি ব্যাখ্যা করেছেন এই সংক্রান্ত আরো কিছু রেফারেন্স থাকলে ভালো হতো ।

  2. আসসালামু আলাইকুম হাফিজ ভাই, কেমন আছেন?

    সামু ব্লগের এক নাস্তিক আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিল
    //সুরা ১০৯:৬
    “লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন”- “যার যার ধর্ম তার তার কাছে”
    এর সাথে-
    ২:১৯১
    “আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে| বস্তুত: ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ| আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে| অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে| তা হলে তাদেরকে হত্যা কর| এই হল কাফেরদের শাস্তি।” এবং এমন অসংখ্যা আয়াত।

    এই দু’টি আয়াত তুলে দিয়ে তিনি একে পরস্পর বিরোধী আয়াত বলে দাবি করেছেন। এখানে দেওয়া দ্বিতীয় আয়াতটি মুসলমানরা আক্রান্ত হলে কি করতে হবে বলা হয়েছে। সেটা কিভাবে ‘যার যার ধর্ম তার তার কাছে আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক হয়? এই আয়াতগুলোর কনটেক্স কি তিনি একবারো পড়ে বুঝার চেষ্টা করেছেন? মুসলমানদের যখন আক্রমণ করা হবে তখন তাদেরকে পাল্টা আক্রমণ করাকে তিনি ‘নীতি-নৈতিকতার বিচারে বর্বর ও চরম অনৈতিক আয়াত’ বলতেও কুন্ঠা বোধ করেননি। তাহলে মুসলমানদের কী করণীয়? (এই অংশটুকু এই লেখা থেকে নেওয়া হয়েছে)//

    উপরোক্ত লেখাটি তারই প্রেক্ষিতে লেখা হয়েছিল, আর তাফসীরটি নেওয়া হয়েছে তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে।

    হাফিজ

    @manwithamission, আবার আমরা যদি বলি “ক্ষমা” করে দিতে হবে , তাহলে বলবে “কাপুরুষ” । তাহলে দেখুন যেদিকেই আমরা যাই তাদের সমালোচনা থেকে রেহাই পাচ্ছি না ।

    এস.এম. রায়হান

    @হাফিজ, (Y)

  3. সহজ অনুবাদ – তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন, আমাদের জন্য আমাদের দ্বীন(ধর্ম) – অনুবাদ হিসেবে ঠিক ভুল না হলেও যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, সেটা অবশ্যই ভুল।

    সূরা কাফিরুন শিরকের মূলোৎপাটনকারি সূরা। (F)